ওয়াশিংটন মালির ভ্রমণকারীদের উপর শর্ত আরোপ করেছিল, যাকে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির লঙ্ঘন হিসেবে সমালোচনা করে মালি সরকার। এবার মার্কিন নাগরিকদের উপর পাল্টা শর্ত আরোপ করল মালি। তারা ঘোষণা করেছে, পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটিতে ভ্রমণ করতে ইচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ব্যবসা ও পর্যটন ভিসার জন্য সর্বোচ্চ ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত বন্ড বা জামানত দিতে হবে। বামাকোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে, ২৩শে অক্টোবর থেকে ব্যবসায়িক বা পর্যটন ভিসা চাইতে গেলে ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ ডলারের মোটা অঙ্কের বন্ড জমা দিতে হবে। মালি বলেছে, মার্কিন পদক্ষেপ দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী ভিসা অ্যাক্সেসের নিশ্চয়তা প্রদানকারী ২০০৫ সালের চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। তাই পারস্পরিকতার নীতির অধীনে মার্কিন পাসপোর্টধারীদের ক্ষেত্রে একই আর্থিক বাধা প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
মালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আইন ও মানবিক মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, তারা অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সর্বদা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সহযোগিতা করেছে’।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন অভিবাসন নীতি প্রয়োগ এবং নির্বাসনে সহযোগিতার জন্য আফ্রিকান সরকারগুলোর ওপর চাপ দিতে কূটনৈতিক উপায় হিসেবে ভিসা বিধিনিষেধ প্রয়োগ করার ফলে এই বিরোধ ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় পরিণত হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, ‘হাই ভিসা ওভারস্টে’ হারযুক্ত দেশগুলোকে লক্ষ্য করে এক বছরব্যাপী পাইলট প্রকল্পের আওতায় বন্ড আরোপ করা সাতটি আফ্রিকান দেশের মধ্যে মালিও রয়েছে
অক্টোবরের শেষের দিকে মালির পাশাপাশি মৌরিতানিয়া, সাও টোমে এবং প্রিন্সিপে এবং তানজানিয়াকেও এই কর্মসূচিতে যুক্ত করা হয়েছিল। গাম্বিয়া, মালাউই এবং জাম্বিয়াকে আগেই যুক্ত করা হয়।বন্ডের আওতায় থাকা ভ্রমণকারীদের অবশ্যই মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের পোর্টালের মাধ্যমে অগ্রিম অর্থ প্রদান করতে হবে এবং কেবলমাত্র তিনটি নির্ধারিত বিমানবন্দর দিয়েই তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ এবং প্রস্থান করতে পারবেন। ভ্রমনার্থীরা সময়মতো চলে গেলে টাকা ফেরত দেওয়া হবে, কিন্তু অতিরিক্ত সময় ধরে অবস্থান বা আশ্রয় আবেদনের জন্য টাকা জব্দ করা হবে। কনস্যুলার অফিসাররা আবেদনকারীদের পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে পৃথক বন্ডের পরিমাণ নির্ধারণ করেন।
জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং মার্কিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য উদ্ধৃত করে যুক্তরাষ্ট্র পাইলট প্রকল্পটিকে ন্যায্যতা দিয়েছে, যেখানে দেখা গেছে যে ২০২৩ সালে ৩০০,০০০ এরও বেশি ব্যবসায়িক ও পর্যটন ভিসাধারীরা তাদের অনুমোদিত সময়সীমার পরেও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেছেন।
সমালোচকরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, ১৮৫ ডলারের ভিসা ফি-র উপরে আরোপিত এই ফি বৈধ ভ্রমণকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপের আগে পর্যটন অর্থনীতির ক্ষতি করতে পারে।
মালি জানিয়েছে তারা ‘সহযোগিতামূলক সম্পর্ক’ তৈরিতে আগ্রহী, তবে পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব বজায় রেখে মালিতে ভ্রমণে ইচ্ছুক মার্কিন নাগরিকদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা চালু করছে। ট্রাম্পের চাপে পড়ে বেশ কয়েকটি সরকার অর্থ প্রদান বা রাজনৈতিক অনুগ্রহের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কৃত অভিবাসীদের গ্রহণ করেছে, আবার অন্যরা প্রত্যাখ্যানের জন্য দ্রুত শাস্তির মুখোমুখি হয়েছে। তৃতীয় দেশের বহিষ্কৃতদের গ্রহণের দাবি প্রত্যাখ্যান করার পর, বুরকিনা ফাসো তার মার্কিন দূতাবাসে সমস্ত ভিসা পরিষেবা স্থগিত করেছে, ফলে বাসিন্দাদের আবেদনের জন্য প্রতিবেশী টোগোতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।
দক্ষিণ সুদান প্রথমে নির্বাসন নীতি নিয়ে বিরোধের পর সকল পাসপোর্টধারীদের ভিসা বাতিল করে, যদিও পরে তারা এশিয়ান এবং ল্যাটিন আমেরিকান দেশগুলোর আটজনকে গ্রহণ করেছে।কূটনৈতিক সূত্র অনুসারে, ইসোয়াতিনি ৫.১ মিলিয়ন ডলার মার্কিন তহবিলের বিনিময়ে ১৬০ জন পর্যন্ত নির্বাসিত ব্যক্তিকে গ্রহণ করতে সম্মত হয়েছে। অন্যদিকে ঘানা, রুয়ান্ডা এবং উগান্ডাও দ্বিপাক্ষিক চুক্তির অধীনে বহিষ্কৃত অভিবাসীদের গ্রহণ করেছে।
সূত্র : আলজাজিরা
Leave a Reply